ওদের কেউ চাকরিপ্রার্থী, আবার কেউ চায় বিদেশে যেতে। আর দালালদেরও টার্গেট এসব সাধারণ মানুষ। এদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটিতে চাকরির ভুয়া সার্কুলার দেখিয়ে চাকরির লোভ দেখায় বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রতিষ্ঠানের দালালরা। তার পর প্রতি চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনকি দেওয়া হয় ভুয়া নিয়োগপত্রও। এভাবে সারাদেশে হাজার হাজার সাধারণ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। কেউ জমি বিক্রি করে আবার কেউ সুদে টাকা ধার নিয়ে কথিত নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছেন। পরে চাকরি না পেয়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় রয়েছে। ভুয়া নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নামসর্বস্ব বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিসহ ডজনখানেক চক্রের সন্ধান পেয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র্যাব।
গত রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চারটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে আরকে চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল, এনএসএসএস, ধানসিঁড়ি লজিস্টিক সার্ভিস ও আশীর্বাদ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একই দিন সিআইডি এশিয়ান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে সিআইডি।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম আমাদের সময়কে বলেন, বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রবিবার অভিযান চালিয়ে চার প্রতিষ্ঠানের ১৩ জনকে জরিমানা এবং ১৭ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে।
সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক আমাদের সময়কে বলেন, স্যামসাং কোম্পানির ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে লোভনীয় চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দেয় এশিয়ান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তার পর চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করছিল তারা। অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সময় পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে কনস্ট্রাকশন লেবার, হেলপার, ইলেকট্রিশিয়ান, ইক্যুইপমেন্ট অপারেটরসহ অন্তত ৫০ পদে নিয়োগ
বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে ভুয়া নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। মোটা অঙ্কের বেতনের অফারও দেওয়া হচ্ছে এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে।
বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের এ ব্লকের ৪৫ নম্বর বাড়িতে থাকা এশিয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস অনলাইনে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করে, বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে স্যামসাং কোম্পানির ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে তারা। এই প্রকল্পে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর বিপুল পরিমাণ চাকরিপ্রার্থীর বায়োডাটা জমা হয়। তারা চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিচ্ছিল। এমনকি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে স্যামসাংয়ের ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারও দেখাচ্ছিল তারা। অভিযোগ পেয়ে সিআইডি প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায়। অভিযানে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গোলাম মাজেদ, নারায়ণ সরকার, মেহেদী, ইমতিয়াজ ও এনায়েত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আশরাফ খান ও সুলতান মাহমুদ পলাতক রয়েছে। অভিযানে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক ভুয়া নিয়োগপত্র এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া চেক, বিভিন্ন ভুয়া মেডিক্যাল সনদপত্র, ভুয়া ডাক্তারের সিলমোহর, অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীর বায়োডাটা, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে লোক নিয়োগের ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সিআইডি বনানী থানায় একটি মামলা করেছে।
এদিকে র্যাব বলছে, চাকরি দেওয়ার নামে কয়েক হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে মেডিক্যাল সার্ভিস ও অফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বেশ কয়েকটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়া বিদেশে লোক পাঠানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। এসব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে।
Leave a Reply